Disease BD

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ কীভাবে বুঝবেন, কী করবেন

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ: কীভাবে বুঝবেন, কী করবেন?

সাধারণত শরীরে জীবাণু প্রবেশের ১০ থেকে ১৪ দিন পর টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ সমূহ প্রকাশ পেতে থাকে।প্রথম ১ থেকে ২ সপ্তাহ পর্যন্ত এই লক্ষণগুলো বাড়তে থাকে। ক্ষেত্র বিশেষে ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত এর স্থায়ীত্বকাল হয় । জ্বর হওয়া এ রোগের প্রধান লক্ষণ। প্রথম চার-পাঁচ দিন জ্বর কখনো বাড়ে আবার কখনো বা কমে, তবে কোনো সময় জ্বর সম্পূর্ণ ছেড়ে যায় না। সতর্ক থাকার জন্য টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ বা উপসর্গগুলো সম্পর্কে সবারই ভালোভাবে ধারণা রাখা উচিত। চলুন জেনে নিই,

০১.টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ সমূহ
  • প্রচন্ড জ্বর সাধারণত ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট অথবা তার থেকেও অনেক বেশি হতে পারে শরীরে
  • মাথাব্যথা ও শরীর প্রচন্ড ব্যথা
  • মাথা ভারী হয়ে যাওয়া
  • শারীরিক দুর্বলতা
  • ক্ষুধামন্দা বা খাওয়ার ইচ্ছা না থাকা
  • ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য 
  • বমি-বমি ভাব বা বমি হওয়া
  • শরীরে অলসতা আসা
  • প্রচণ্ড কফ বা কাশি 
  • পেটে ব্যথা হওয়া
  • জ্বরের ২য় সপ্তাহে সাধারণত একজন রোগীর পেটে এবং পিঠে গোলাপি রঙের দানা দেখা যাওয়া
  • হার্ট রেট বা হৃদস্পন্দন অনেক কমে যাওয়া

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় এই জ্বর প্রথম সপ্তাহে ধরা পড়ে না। দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে জ্বর ধরা পড়ে এবং কখনো মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। ওষুধ চলা অবস্থায়ও সপ্তাহ খানেক জ্বর থাকতে পারে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হলে।

০২.প্রাথমিক স্তর (লক্ষণ সমূহ) 
  • জ্বর শুরু হয় অল্প থেকে এবং সারা দিন বাড়তেই থাকে, জ্বর সাধারণত ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত পৌঁছায়
  • ঠাণ্ডা
  • মাথাব্যথা
  • দুর্বলতা এবং ক্লান্তি
  • পেশীতে ব্যথা
  • পেট ব্যথা
  • ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য
  • ফুসকুড়ি
  • তাছাড়া কাশি, ক্ষুধা হ্রাস এবং ঘাম হতে পারে
০৩.পরবর্তি স্তর (লক্ষণ সমূহ) 
  • লক্ষণগুলি শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরে, অন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে
  • পেট ব্যথা হতে পারে
  • পেট ফোলা বা ফেপে যাওয়া
  • সেপসিস – অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রমণ যা সারা শরীরে ছড়িয়ে পরে
০৪.গুরুতর স্তর (লক্ষণ সমূহ) 
  • বিভ্রান্ত হওয়া
  • আশেপাশের কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে না পারা
  • চারপাশের মানুষের সাথে যেকোনো কাজের প্রতিক্রিয়া দিতে না পারা

কিছু মানুষের মধ্যে, জ্বর চলে যাওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর লক্ষণগুলি আবার ফিরে আসতে পারে

০৫.টাইফয়েড এর ৩টি পর্যায় 
  • প্রথম পর্যায়- টাইফয়েডের জ্বরের লক্ষণকে আমরা তিন পর্যায়ে ভাগ করতে পারি| প্রথম ধাপে জ্বর আসে এবং শরীর গরম হতে শুরু করে| এর সাথে মাথা ব্যথা, শরীর-হাত-পা ব্যথা, পেটে ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়|
  • দ্বিতীয় পর্যায়- দ্বিতীয় পর্যায়ে রোগীর জ্বর অনেক বেশি বেড়ে যায়| সাধারণত ৪০ ডিগ্রী থেকে শুরু করে ১০৪ ডিগ্রী মধ্যে জ্বর থাকতে পারে| এর ফলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়, যা থেকে অলসতার সৃষ্টি হয় |
  • তৃতীয় পর্যায়- তৃতীয় পর্যায়ে রোগীর শরীর আরো খারাপ হতে থাকে| প্রচন্ড জ্বরের সাথে শারীরিক দুর্বলতা অনেকাংশে বেড়ে যায়| ২৪ ঘন্টা অন্তর অন্তর শরীরে জ্বর বাড়তে থাকে এবং নিঃশ্বাস নিতেও সমস্যা হয়|

    টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ, টাইফয়েড জটিলতা
০৬.টাইফয়েড এর জটিলতা

গুরুতর টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত গুরুতর বমি, ডায়রিয়া এবং পেট ফোলা অনুভব করতে পারে । এর জন্য রোগীকে অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়।

একজন ব্যক্তি নিম্নলিখিত জটিলতাগুলিও অনুভব করতে পারেন:

  • জিআই ট্রাক্ট এ রক্তপাত এবং আলসার হওয়া।
  • অন্ত্রের ছিদ্র, যার ফলে পেরিটোনাইটিস হতে পারে। এটি প্রায় ৮-৩৯ % মানুষের মধ্যে ঘটে।
  • মায়োকার্ডাইটিস বা পেরিকার্ডাইটিস।
  • টাইফয়েড এনসেফালোপ্যাথি, সাধারণত যার মৃত্যুহার ৫৫% হয়ে থাকে।
  • ফুসফুসের জটিলতা, যেমন ফোড়া, এম্পাইমা ।
  • মেনিনজাইটিস হলো যখন জীবাণু মস্তিষ্কের এবং মেরুরজ্জুর আবরণীকে আক্রমণ করে। এ রোগটি খুবই ভয়াবহ আর তার মুখ্য কারণ হলো, যখন রোগটির লক্ষণ আমাদের শরীরে প্রকাশ পায় তখন চিকিৎসার জন্য সময় থাকে ২৪ ঘণ্টার বা তার থেকেও কম। 
  • অনেক সময় টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ বুঝে উঠার আগেই সেপসিস হয়ে যেতে পারে। সেপসিস হলো যখন রোগীর শরীর তার নিজের ইমিউন সিস্টেম দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।সাধারণত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা এ ধরণের সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে সবচেয়ে বেশি।
  • নিউরোলজিক উপসর্গ, যেমন সাইকোসিস এবং পেশী অনমনীয়তা ।
০৭.কখন ডাক্তার দেখাবেন ?

আপনি যদি মনে করেন আপনার টাইফয়েড জ্বর হতে পারে বা হয়েছে তাহলে উচিত সাথে সাথে একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে যোগাযোগ করা।এটি টাইফয়েড জ্বর নির্ণয় এবং আরও দ্রুত চিকিৎসা পেতে সাহায্য করতে পারে।তবে অবশ্যই আপনাকে মনে রাখতে হবে আপনি যেন সঠিক অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন নাহলে ভুল চিকিৎসার দরুণ রোগীর স্বাস্থ্য আরো বেশি খারাপ হবে।

আরো পড়ুন-
টাইফয়েড জ্বরের কারণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top