আপনার যদি খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এর প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে একটু একটু করে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করতে হবে। একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস আপনার ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে অনেক সাহায্য করবে।শুধু তাই নয় বরং আপনাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো রাখতে সাহায্য করার পাশাপাশি দেহের মূল প্রয়োজনীয় শক্তির সরবরাহ দিয়ে থাকবে এটি। তাই ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জানা খুব জরুরী।
Table of Contents
Toggle০১.ডায়াবেটিস রোগীর যথাযত খাদ্যাভ্যাস
টাইপ ২ ডায়াবেটিস হলেই যে আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু খাবার খাওয়া একেবারেই ছেড়ে দিতে হবে তা কিন্তু নয়। বিভিন্ন রকমের খাবার খেতে পারবেন, তবে কিছু খাবার অবশ্যই আপনাকে পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।
তিনটি বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ—
- বৈচিত্রময় খাবার খাওয়া:- প্রতিদিন একই ধরনের খাবার না খেয়ে, বিভিন্ন রকমের ফলমূল, শাকসবজি ওশ্বেতসার-জাতীয় খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যেমন: লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি , আলু।
- খাবার কমিয়ে দিন:- চিনি, লবণ ও চর্বিজাতীয় খাবারের পরিমাণ একেবারেই কমিয়ে দিতে হবে, অর্থাৎ যতটুকু না খেলেই নয় ঠিক ততটুকুই খাওয়া।
- সময়মত খাবার খাওয়া:- প্রতিদিন সকালের নাশতা, দুপুরের ও রাতের খাবার নির্দিষ্ট সময়ে খেতে হবে। কোনো বেলার খাবার যেন সহজে বাদ না পড়ে।
০২.ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা (সুষম খাদ্য)
সুষম খাদ্যাভ্যাসের অর্থ হল নির্দিষ্ট কিছু প্রয়োজনীয় খাবার বেশি পরিমাণে এবং অন্যান্য খাবারগুলো কম পরিমাণে খাওয়া। আবার আমরা জানি, কেবল এক ধরনের খাবার দেহের সব পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ করতে পারে না। তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মূল হল বৈচিত্র্য নিয়ে আসা । এই বৈচিত্র্য আনা যায় প্রতিদিন মূল পাঁচটি গ্রুপের প্রত্যেকটি থেকে বিভিন্ন খাবার বেছে নেওয়ার মাধ্যমে।
একটি স্বাস্থ্যকর ও সুষম ডায়েটের জন্য পাচঁটি প্রধান পদের খাবার খাওয়া প্রয়োজন। ডায়াবেটিস রোগীর জন্য মোট ক্যালরির ২০% আমিষ থেকে, ৩০% ফ্যাট থেকে এবং ৫০% আসবে শর্করা থেকে।
১। কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাঃ কার্বোহাইড্রেট হল এক ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ (কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সমন্বিত রূপ। এটি একটি জৈব যৌগ)। এতে হাইডোজেন ও অক্সিজেনের অনুপাত ২:১। আমাদের শরীরে শক্তির সরবরাহ করা হলো কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্যের প্রধান কাজ ।
কার্বোহাইড্রেট এর উৎস হলো ভাত, রুটি, মিস্টি জাতীয় খাবার ইত্যাদি । ডায়াবেটিস রোগীদের কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার অনেক কমিয়ে খেতে হয় ।
২।প্রোটিন বা আমিষঃ অ্যামাইনো এসিডের পলিমার দ্বারা বেষ্টিত উচ্চ ভরযুক্ত নাইট্রোজেন সহ জটিল যৌগকে প্রোটিন বা আমিষ বলে। খাদ্যের ছয়টি উপাদানের মধ্যে প্রোটিন স্বাস্থের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। মানব দেহের কোষ গঠনে প্রোটিন সাহায্য করে থাকে আর শুধু তাই নয় বরং এটি অঙ্গের গঠন, কার্যকারীতা এবং নিয়ন্ত্রনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
উদ্ভিদ ও প্রাণীভিত্তিক উভয় খাবারেই প্রোটিন থাকে। প্রোটিন জাতীয় খাবার হলো অল্প চর্বি জাতীয় দুধ, টক দই,মাছ,ডিম ও মুরগি ইত্যাদি। ডায়াবেটিস রোগীদের প্রোটিন জাতীয় খাবারে বাধা নেই, যদি তাদের কিডনি তে কোন জটিলতা না থাকে।
৩।ফ্যাট বা চর্বিঃ চর্বি হচ্ছে প্রাকৃতিক তৈলাক্ত পদার্থ যা প্রাণীজ শরীরে বা ত্বকের নিচে কোন অঙ্গের পাশে জমা হয়ে থাকে।অন্যভাবে বলা যায়, প্রাকৃতিক গ্লাইসেরল এস্টার ও ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ, যা সাধারন রুম তাপমাত্রায় জমাট হয়ে থাকে এবং প্রাণীজ , উদ্ভিদ জগতের প্রধানতম উপাদান ।
উপকারী চর্বি যেমন- বাদাম,মাছের তেল, অলিভ ওয়েল ইত্যাদি ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারে। তবে ফ্যাট জাতীয় খাবারের অতিরিক্ত গ্রহণ ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর।
৪।পানীয়ঃ মানব দেহে পানি অপরিহার্য ভুমিকা পালন করে। এটি ছাড়া মানব দেহ অচল। দেহের রক্ত, মাংস,হাড়,অস্থি,মজ্জা,দাত,ত্বক সবকিছুর জন্য পানি অপরিহার্য। পানি আমাদেরকে বেচে থাকতে সাহায্য করে। এজন্য পানির অপর নাম জীবন বলা হয়। পানি ছাড়া মানুষের পৃথিবীতে বেচে থাকা দুষ্কর বিবেচনা করা হয়। মানুষের দেহের অভ্যন্তরীন কাজে পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
একজন মানুষের দৈনিক কতটুকু খাবার ও পানীয় প্রয়োজন তা নির্ভর করে তার বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক পরিশ্রম এবং ওজন ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে কী ধরনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তার ওপর।তাই ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে আমাদের সকলের জানা জরুরী।
০৩.ডায়াবেটিসে প্রয়োজনীয় ক্যালোরি
- ডায়াবেটিস রোগীর (মধ্য বয়সী অথবা বৃদ্ধ) জন্য সাধারণত ১০০০-১৬০০ কিলোক্যালরি প্রয়োজন
- ডায়াবেটিস রোগীর (অল্প বয়সী) জন্য সাধারণত ১৮০০-৩০০০ কিলোগ্রাম প্রয়োজন হয়
- ডায়াবেটিস রোগীর (বয়স্ক) সাধারণত ১৪০০-১৮০০ কিলোক্যালরির বেশি প্রয়োজন হবে না
- প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ হল ৬০-১১০ গ্রাম (প্রতিদিন)
- ফ্যাট গ্রহণের পরিমাণ ৫০-১৫০ গ্রাম প্রয়োজন (প্রতিদিন)
- কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের পরিমাণ হল ১৮০ গ্রাম প্রতিদিন (প্রায়)
০৪.ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট
সকালের নাস্তা (সকাল ৭.৩০–৮ টা)
১।রুটি- ১টা গমের আটার রুটি (মিডিয়াম)
২।দুধ- ১ গ্লাস ফ্যাট ছাড়া দুধ অথবা স্কিম মিল্ক
৩।ডিম- ১ টা হাঁসের বা মুরগীর ডিম (সিদ্ধ বা ভাঁজি)
৪।শাক সবজি- সম্পুর্ণ ১ কাপ পাতা যুক্ত সবজি বা ১/২ কাপ শাক
দুপুরের খাবার (দুপুর ১.৩০–২টা)
১।ভাত- দেড় কাপ ভাত
২।মাংস বা মাছ -রান্না করা মাছ বা মাংস ৬০ গ্রাম পরিমাণ (ফ্যাট ছাড়া খেতে হবে)
৩।শাক সবজি- সম্পুর্ণ ১ কাপ পাতা যুক্ত সবজি অবশ্যই খাকতে হবে,বাকী দেড় কাপ অন্যান্য শাক থাকবে
৪।ডাল- ১ কাপ মাঝারি ঘন ডাল
বিকেলের নাস্তা (বিকেল ৫.৩০–৬টা)
১।সিজনাল ফল- পছন্দমত ১ সারভিং সিজনাল ফল
২।খাদ্য (বাদাম এবং বুট জাতীয়)- ১/৪ কাপ বুট অথবা বাদাম জাতীয় খাদ্য
৩।শাক সবজি- পাতা যুক্ত শাক (১/২ কাপ) থাকবে,আর বাকী আধা কাপ অন্যান্য সবজি থাকতে হবে
৪।সিজনাল ফল- ১ সারভিং সিজনাল ফল খেতে হবে
রাতের খাবার (রাত ৯–৯.৩০টা)
১।রুটি অথবা ভাতঃ ১/২ কাপ ভাত অথবা সম্পুর্ণ ১ টা আটার রুটি
২।মাছ বা মাংসঃ সাধারণত রান্না করা মাছ বা মাংস ৬০ গ্রাম পরিমাণ (ফ্যাট ছাড়া খেতে হবে)
এছাড়া শারিরিক প্রয়োজন ও অবস্থা অনুযায়ী ডায়েট প্লান বা ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা তৈরি করতে একজন ডায়াটেশিয়ান ও এক্সারসাইজ প্লান করতে একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত আমাদের।
০৫.ডায়াবেটিস রোগীরা যে খাবার এড়িয়ে চলবেন
- মিষ্টি জাতীয় খাবার
- অতিরিক্ত তেলে রান্না করা খাবার
- ডুবোতেলে ভাজা খাবার
- চর্বি জাতীয় খাবার যেমন- ঘি,ডালডা ইত্যাদি
- গরু, খাসী, পাখির ও হাঁস এর মাংস এড়িয়ে চলতে হবে
০৬.ডায়াবেটিস রোগীর পরামর্শ
- প্রতিদিন ৩৫-৪০ মিনিট দ্রুত গতিতে হাঁটা।
- ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত ব্যক্তি সকালে, দুপুরের এবং রাতের খাবারের মাঝে কিছু হাল্কা খাবার খাওয়া।
- তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলা।
- বেশি খেতে হবে ফাইবার জাতীয় খাবার যাতে করে রক্তে ধীরে ধীরে গ্লোকোজ এর স্তর বাড়াতে থাকে এবং নিয়ন্ত্রণ এ রাখে।
- ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত ব্যক্তিকে ধীরে ধীরে খাদ্য খেতে হবে।
আরো পড়ুন-
ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল