DiseaseBD |Bangladesh’s Trusted Online Medicine Index & Comprehensive Healthcare Portal

Disease
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার, জানুন সাবধানতা !

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার, জানুন সাবধানতা !

০১.ডেঙ্গু কি

ডেঙ্গু হলো এক ধরনের ভাইরাস যা এডিস গোত্রের স্ত্রী মশাবাহিত, ডেঙ্গি নামে পরিচিত। সংক্রমিত মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাসটির ডেঙ্গু জীবাণু মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়।কিন্তু এই রোগ কোনো আক্রান্ত মানুষ থেকে আরেক মানুষে ছড়ায় না। তবে সংক্রমিত মানুষটিকে কামড়ানোর ফলে আক্রান্ত মশা যদি অন্য মানুষকে কামড়ায় তাহলে সেই মানুষটি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। ডেঙ্গি ভাইরাসে সংক্রমণের কারণে ডেঙ্গু জ্বর হয়। ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ সম্পর্কে আমাদের জানা জরুরি কারণ সব বয়সের মানুষেরই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যদি সংক্রমিত মশার সংস্পর্শে আসে ।

০২.ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ (সাধারণ)
  • সাধারণভাবে ডেঙ্গুর লক্ষণ হলো জ্বর। ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা হতে পারে। কখনো জ্বর একটানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেয়ার পর আবারও শরীরে জ্বর আসতে পারে।
  • শরীরে ব্যথা হওয়া ডেঙ্গুর অন্যতম লক্ষণ । সাথে মাথাব্যথার পাশাপাশি চোখের পেছনে ব্যথা হয়। চামড়ায় র‌্যাশ অথবা লালচে দাগ থাকতে পারে।
  • শরীর অনেক ঠান্ডা হয়ে যায়। শরীর ম্যাজম্যাজ করা অথবা ক্ষুধা কমে যাওয়া লক্ষণও দেখা দিতে পারে রোগীর।
  • সিভিয়ার ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে রক্তবমি, তীব্র পেট ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া,ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ, মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ,  শ্বাসকার্য দ্রুত হওয়া, শরীর এ ঠান্ডা অনুভব অথবা ঘাম হওয়া এবং ঘুম ঘুম ভাব বা চেতনা হারানো।
০৩.ডেঙ্গু জ্বরের বিভাজ়ন ও লক্ষণ 

আমরা  ডেঙ্গু জ্বরকে কয়েকটি  ভাগে ভাগ করতে পারি । যেমন- ডেঙ্গুর ক্লাসিক্যাল জ্বর,ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর,এবং ডেঙ্গু শক সিনড্রোম।এসব ডেঙ্গুর কিছু লক্ষণ আছে সেগুলো জানা থাকলে আমরা নিজেরা নির্ণয় করতে পারব ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছি কি-না। ডেঙ্গুর জ্বরের লক্ষণগুলোঃ

০৩.১ ডেঙ্গুর ক্লাসিক্যাল জ্বরসমূহ

  • ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুতে জ্বর খুবই তীব্র হয় এবং সেই সাথে সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়এই জ্বর ১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে।
  • তীব্র পেটে ব্যথাও হতে পারে।
  • শরীরে বিশেষ করে পিঠ, কোমর,হাড়সহ বিভিন্ন অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশীতে তীব্র পর্যায়ের ব্যথা হয়।
  • মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা হয়।
  • এই জ্বরের আরেক নাম ব্রেক বোন ফিভার।
  • স্কিন র‌্যাশ হতে পারে যাতে জ্বর হওয়ার ৪-৫ দিনের সময় সারা শরীরে লালচে দানা হয়ে যায় অনেকটা এলার্জির মতো ধরা হয়।
  • বমি বমি ভাব বা বমি হয়ে যেতে পারে যেকোনো সময়।
  • খাবারের রুচি কমে যাওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে।
  • শরীরে জ্বর সাধারণত ৪ অথবা ৫ দিন থাকে । কখনো ২ বা ৩ দিন পর আবারও এ জ্বর ফিরে আসে যাকে বাই ফেজিক ফিভার বলা হয়ে থাকে।

০৩.২ ডেঙ্গুর হেমোরেজিক জ্বরসমূহ

রোগীর এই অবস্থাটি সবচেয়ে জটিল মনে করা হয়। এই জ্বরে ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ এবং  উপসর্গের পাশাপাশি আরও অনেক ধরণের সমস্যা দেখা দেয় যা রোগীর স্বাস্থ্যের অনেক অবনতি করে । যেমন-

  • শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে ক্রমাগত রক্ত পড়া শুরু হয়। যেমন- নাক ও মুখ দিয়ে,মাড়ি ও দাঁত হতে, চামড়ার নিচে,রক্তবমি,কফের সঙ্গে,চোখের মধ্যে এবং চোখের বাহিরে, নারীদের বেলায় অসময়ে ঋতুস্রাব অথবা রক্তক্ষরণ যদি শুরু হয় তাহলে অনেকদিন পর্যন্ত রক্ত পড়তে থাকে ।
  • এই রোগের বেলায় অনেক সময় বুকে পানি, পেটে পানি দেখা দিতে পারে। অনেক সময় রোগীর জন্ডিস হয়ে যায় লিভার আক্রান্ত হয়ে । আবার কিডনি আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর সহ নানান জটিলতা দেখা দিতে পারে।

০৩.৩ ডেঙ্গু শক সিনড্রোমগুলো

ডেঙ্গু জ্বরের সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ হল ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরের সাথে সার্কুলেটরি ফেইলিউর হয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয়। লক্ষণগুলো হলো

  • রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া।
  • নাড়ীর স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ ও দ্রুত হয়।
  • শরীরের হাত ও পা ঠান্ডা হয়ে যায়।
  • প্রস্রাব যদি অনেক কমে যায়।
  • হঠাৎ করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলা এই ধরণের রোগীর একটি সাধারণ লক্ষণ। এটি থেকে জটিল অবস্তায় গিয়ে রোগীর মৃত্যু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ,বাঁচতে সচেতন হোন
০৪.ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে
  • জনবসতিপূর্ণ এলাকায় না থাকার চেষ্টা করতে হবে
  • নিয়মিত বাড়িতে মশারি ও মশা তাড়ানোর ঔষধ ব্যবহার করতে হবে 
  • দিনের বেলা ও সন্ধ্যার সময় ডেঙ্গু মশা কামড়ায় এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে
  • বাইরে যাওয়ার সময় ফুলহাতা জামা ও মোজা পরার অভ্যাস করতে হবে যাতে করে মশার উপদ্রপ থেকে বাঁচা যায় সহজে
  • জানালায় নেট লাগানো বা দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখা উচিত
  • যদি এয়ারকন্ডিশন থাকে তাহলে ব্যবহার করতে হবে
  • দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে যদি ডেঙ্গুর লক্ষণ থাকে 
০৫.যে খাবারগুলো বেশি করে খাবেন

ডালিম: ডালিমে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন (পরিমাণ মতো মিনারেলও আছে ) । নিয়ম করে ডালিম খেলে প্লাটিলেটের সংখ্যা বেড়ে যাবে । এই উপকারী ফলটি খেলে শরীরের ক্লান্তি ও অবসাদ অনুভূতিও দূর হবে। রোগ নিরাময়ের পথ্য হিসেবে এটি প্রাচীন কাল থেকে ব্যবহার করা হচ্ছে।।

কমলা: কমলা এবং কমলার রস ডেঙ্গু জ্বরে অনেক ভালো কাজে আসে । কারণ ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিওক্সিডেন্ট আছে এটিতে । আরএই দুটি উপাদান সাধারণত ডেঙ্গু জ্বর নিয়ন্ত্রণে খুবই ভালো কাজ করে থাকে।

পেঁপে পাতার জুস: ডেঙ্গু জ্বর হলে রোগীর শরীরে প্লাটিলেট কমে যায় । তাই এ সময় উপকার করতে পারে পেঁপে পাতা। পেঁপে পাতা পাপাইন ও কিমোপেইনের মতো এনজাইম সমৃদ্ধ হয়ে থাকে যা হজমে অনেক বেশি সহায়তা করে। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি করে প্লাটিলেটের পরিমাণ। সেজন্য আমাদের প্রতিদিন ৩০ এমএল পেঁপে পাতার তৈরি জুস খেতে হবে। ঘরে বসেই আমরা তৈরি করতে পারব এ জুস।

ডাবের পানি: শরীরে তরল পদার্থের শূন্যতা সৃষ্টির অন্যতম কারণ ডেঙ্গুর জ্বর । এতে করে সৃষ্টি হয় ডিহাইড্রেশন। এ সময় বেশি বেশি করে ডাবের পানি পান করা হলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে। কেননা ডাবের পানিতে  রয়েছে ইলেক্ট্রোলাইটসের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি।

ব্রুকলি: ভিটামিন কে’র একটি ভালো উৎস হলো ব্রুকলি । ভিটামিন কে রক্তের প্লাটিলেট সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এটি সাধারণত  অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ সমৃদ্ধ। কোনো ব্যক্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে অবশ্যই বেশি করে ব্রুকলি খাওয়া উচিত।

হলুদ: ডেঙ্গু জ্বর নিরাময়ের জন্য আমরা এক গ্লাস দুধের সঙ্গে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে পান করতে পারি । এটি ডেঙ্গু জ্বর থেকে অতি দ্রুত সুস্থ্য করে তুলে মানুষকে।

মেথি: ডেঙ্গু জ্বর হলে মেথি আমাদেরকে অতি সহজে ঘুমিয়ে যেতে সহায়তা করবে। সেই সঙ্গে আমাদের সহায়তা করবে অতিরিক্তমাত্রার জ্বর কমিয়ে আনতে। তবে মেথি গ্রহণ করার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরমার্শ করে নেয়া উচিত।

কিউইফল: কিউইফলটিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন। এছাড়াও এটিতে রয়েছে পটাশিয়ামও । এই ফলটি বেশি পরিমাণে খাওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপ ও ইলেক্ট্রোলাইট স্তর নিয়ন্ত্রণে থাকে। লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এ ফলটি খেলে ।

পালংশাক: পালংশাক সবজি তে প্রচুর পরিমাণে আইরন এবং

ওমেগো থ্রি ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়। এটি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। শাকটি যদি বেশি করে গ্রহণ করা হয় তাহলে অতি দ্রুত দেহের প্লাটিলেট বৃদ্ধি পায়।

০৬.যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলবেন

তৈলাক্ত ও ভাজা খাবার: ডেঙ্গু জ্বর হলে আমাদেরকে অবশ্যই তৈলাক্ত এবং ভাজা খাবরগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। এই ধরনের খাবারগুলো খেলে আমাদের শরীরে উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে।

ক্যাফিনযুক্ত পানীয়: ডেঙ্গু হলে তরল খাবার বেশি করে খাওয়ার পাশাপাশি ক্যাফিনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। এই ধরনের খাবারগুলো আমাদের হার্ট রেট বাড়িয়ে দিতে পারে। সেই সাথে ক্লান্তি নিয়ে আসতে পারে শরীরে ।

মসলাযুক্ত খাবার: মসলাযুক্ত খাবারগুলো অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে । এই ধরনের খাবার বেশি পরিমাণে খেলে পাকস্থলীর প্রাচির নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

০৭.কখন ডাক্তার দেখাবেন?

ডেঙ্গু জ্বরের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। সাধারণত এই জ্বর নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়। তাই উপসর্গ অনুযায়ী সাধারণ চিকিৎসাই যথেষ্ট মনে করা হয় । তবে কিছু ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত-

  • শরীরের যে কোনো অংশ থেকে রক্তপাত হলে।
  • শ্বাসকষ্ট হলে বা পেট ফুলে পানি আসলে।
  • প্লাটিলেটের মাত্রা কমে গেলে।
  • প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে।
  • জন্ডিস যদি দেখা দেয়।
  • শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা দিলে।
  • প্রচণ্ড পেটে ব্যথা বা বমি হলে।

    আরো পড়ুন-
    ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা ও সচেতনতা সম্পর্কে জানুন !
Scroll to Top