DiseaseBD |Bangladesh’s Trusted Online Medicine Index & Comprehensive Healthcare Portal

Disease
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors
ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা ও সচেতনতা সম্পর্কে জানুন

ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা ও সচেতনতা সম্পর্কে জানুন !

ডেঙ্গু একটি ভাইরাল সংক্রমণ যা মশা থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। এটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় জলবায়ুতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বেশিরভাগ লোকেরই উপসর্গ দেখা যায়না । কিন্তু এর সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলি হল উচ্চ মাত্রার জ্বর, মাথাব্যথা, শরীরে ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং ফুসকুড়ি হওয়া। বেশিরভাগই 1-2 সপ্তাহের মধ্যে ভাল হয়ে যাবে। কিছু লোক গুরুতর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় এবং তাদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা এর জন্য হাসপাতালে অবস্থান করার প্রয়োজন হয়।

১.ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা

ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত বাসায় প্রাথমিক পরিচর্যা ও চিকিৎসা শুরু করে দিতে হবে। আরও কিছু বিষয় যা আমাদের মানা উচিত –

০১. ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে আমাদের অবশ্যই বিশ্রাম নিতে হবে। এই সময়ে রোগীদের শারীরিক দুর্বলতাটাও থাকে অত্যধিক তাই বিশ্রাম নেয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। উপসর্গ শুরুর  ৭ থেকে ১০ দিন এর মধ্যে ভারী কাজ ও মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম করা যাবে না। কিন্তু রোগী স্বাভাবিক হাঁটাচলা, দৈনন্দিন কাজ করতে পারবেন। তবে বাড়িতে অবস্থান করে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়া শ্রেয় বলে মনে করা হয় ।

০২. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি এবং তরল জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। আমাদের মাথাব্যথা ও পেশি ব্যথা কম হবে যদি শরীরে জলীয় অংশ বেশি থাকে। ডেঙ্গু রোগীর প্রতিদিন আড়াই থেকে শুরু করে তিন লিটার পর্যন্ত পানি পান করতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরে প্রধান চিকিৎসা হলো তরল ব্যবস্থাপনা বা ফ্লুইড রিপ্লেসমেন্ট । পানির সঙ্গে খেতে পারেন ডাবের পানি,স্যুপ,ওরস্যালাইন, ফলের শরবত, দুধ ইত্যাদি।

০৩.পেয়ারার শরবত পান করা উচিত । রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয়  করার ক্ষেত্রে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই পানীয়টি  গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

০৪.সাধারণত ডেঙ্গু রোগীর প্লাটিলেট এর পরিমাণ কমে যায়। তাই প্লাটিলেট বাড়ে এমন  সব খাবার খেতে হবে। যেমন- কাঠবাদাম,গ্রিন টি, সাইট্রাস ফল, ব্রোকলি, দই, সূর্যমুখী বীজ, ক্যাপসিকাম, পালংশাক,রসুন, আদা ও হলুদ।

০৫. রক্তের প্লাটিলেট সংখ্যা বাড়াতে নিম পাতার রস অনেক ভালো কাজ করে। এটি পাশাপাশি শ্বেত রক্তকনিকার সংখ্যাও বৃদ্ধি করে। মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে  নিম পাতা ভুমিকা পালন করে।

০৬.ডেঙ্গু জ্বর কমানোর জন্য শুধুমাত্র প্যারাসিটামল গ্রুপের ওষুধ ব্যবহার করুন। প্যারাসিটামল ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পরপর জ্বরের মাত্রা অনুযায়ি ব্যবহার করা যাবে। দিনে যদি ৮ থেকে ১০টি ট্যাবলেটের (সর্বোচ্চ ৪ গ্রাম) বেশি ব্যবহৃত হয় তাহলে হলে লিভারের ক্ষতিসহ নানা জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। জ্বর কমানোর জন্য কোনোভাবেই আমাদের অ্যাসপিরিন বা ব্যথানাশক এনএসএইড গ্রুপের ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না। ওষুধ ছাড়াও জ্বর কমানোর  জন্য যদি  মাথায় পানি ঢালা, শরীর মুছে দেওয়া বা রোগীকে গোসল করানো হয় তাহলে অনেক উপকার হয়।

০৭. অন্যান্য ওষুধ: জ্বরের পাশাপাশি অনেকের ডায়রিয়া বা বমি বমি ভাব থাকে। চিকিৎসকেরা সাধারণত এসব ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা তে আরও কিছু ওষুধ দিয়ে থাকেন। তবে ডেঙ্গু রোগীদের স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক এর কোনো প্রয়োজন নেই।

০৮.সতর্কসংকেত: রোগীকে কিছু সতর্কসংকেত সম্পর্কে জেনে রাখতে হবে এবং এসব উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে বা হাসপাতালে চলে যেতে হবে। সেগুলো হলো অনবরত বমি, তীব্র পেটে ব্যথা, অস্বাভাবিক দুর্বলতা,গায়ে লাল ছোপ ছোপ দাগ, অসংলগ্ন কথা বলা,হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া,শ্বাসকষ্ট, প্রস্রাবে রক্ত, প্রস্রাবের পরিমাণ অনেক কমে যাওয়া বা রোগীর মুখ, দাঁতের মাড়ি, রক্তবমি, পায়ুপথে রক্তক্ষরণ ।

২.অতিরিক্ত ঝুঁকিতে কারা

১ বছর এর নিচে বা ৬৫ বছরের ওপরে,উচ্চ রক্তচাপ, গর্ভবতী নারী, দৈহিক স্থুলতা, ডায়াবেটিস,হার্টের সমস্যা, ডায়ালাইসিসের রোগী। সাধারণত এসব রোগীকে শুরু থেকেই হাসপাতালে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা ও কী কী টেস্ট বা পরীক্ষা করা উচিত 

৩.কী কী টেস্ট বা পরীক্ষা করা উচিত 

অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের যদি ডেঙ্গু জ্বর হয় তাহলে খুব বেশি পরীক্ষা নিরীক্ষা করার প্রয়োজন পরে না। ডেঙ্গু জ্বরের নির্দেশিত পরীক্ষা হল-

০১. জ্বরের ৪-৫ দিন পরে সিবিসি এবং প্লাটিলেট টেস্ট করাই যথেষ্ট। এর আগে করলে রিপোর্ট স্বাভাবিক থাকে এবং অনেকে এই কারণে বিভ্রান্তিতে পড়তে পারেন। প্লাটিলেট এর পরিমাণ যদি ১ লক্ষের কম হয় তাহলে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া উচিত একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ।

০২.সাধারণত জ্বর হওয়ার ৫ বা ৬ দিন পর ডেঙ্গু এন্টিবডির পরীক্ষা করা যেতে পারে। এই পরীক্ষাটি রোগ শনাক্তকরণে অনেক সাহায্য করে কিন্তু রোগের চিকিৎসায় এর তেমন কোনো ভূমিকা থাকেনা । এই পরীক্ষা না করলেও কোন সমস্যা নেই । প্রয়োজনে ব্লাড সুগার এবং লিভারের পরীক্ষাসমূহ যেমন এসজিওটি, এসজিপিটি,এলকালাইন ফসফাটেজ ইত্যাদি করা যেতে পারে । এছাড়াও প্রয়োজন বোধে বুকের এক্সরে এবং পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম করা যাবে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা নিশ্চিতকরণে।

০৩.ইমিউনোঅ্যাসে টেস্ট বা এনজাইম লিংকড ইমিউনোসর্বে টেস্ট হল একটি ল্যাবরেটরি টেস্ট যা প্রোটিন বা এনজাইম এর পরিমাণ মাপের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই টেস্টে একটি নির্দিষ্ট প্রোটিন বা এনজাইম এনটিবডি বা এনজাইম কনজুগেট ব্যবহৃত হয়। টেস্টে নমুনা থেকে এই প্রোটিন বা এনজাইমের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয় এবং পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। এই টেস্টে রক্ত নমুনা হিসেবে নেওয়া হয় এবং নমুনায় ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রতিক এনটিবডি বা এনটিজেন সনাক্ত করা হয়। ডেঙ্গু জ্বরের জন্য এলিসা টেস্ট একটি ভারসাম্যপূর্ণ এবং নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।

০৪.হেমাটক্রিট বা পুষ্টির উপর পরীক্ষা যার মাধ্যমে রক্তে প্লেটলেট সংখ্যা ও হেমোগ্লোবিন সংখ্যা মাপা হয়।এছাড়াও কিমোট্রান্সফারেজ পরীক্ষার দ্বারা  রক্তের কিমোট্রান্সফারেজ সংখ্যা মাপা হয়।

০৫. ডাক্তার যদি মনে করেন যে রোগী ডিআইসি জাতীয় জটিলতায় আক্রান্ত হয়েছেন, সেক্ষেত্রে ডি-ডাইমার,এপিটিটি, প্রোথ্রোম্বিন টাইম ইত্যাদি পরীক্ষা করা যেতে পারে ।

উপরে উল্লিখিত পরীক্ষাগুলোর মধ্যে ইমিউনোঅ্যাসে টেস্ট এবং ডেঙ্গু ভাইরাসের এনটিজেন ডিটেকশন টেস্ট ডেঙ্গু জ্বরের ডায়াগনোসিস করার জন্য বেশি ব্যবহৃত  হয়।

আরো পড়ুন-
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার, জানুন সাবধানতা !

Scroll to Top