হেপাটাইটিস এমন একটি শব্দ যা লিভারের (যকৃৎ) প্রদাহ বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। ভাইরাল হেপাটাইটিস, অটোইমিউন হেপাটাইটিস এবং বিষাক্ত হেপাটাইটিস সহ বিভিন্ন ধরণের হেপাটাইটিস রয়েছে। ভাইরাল হেপাটাইটিস হল হেপাটাইটিসের সবচেয়ে সাধারণ প্রকার এবং এই ভাইরাসের জন্য বিভিন্ন ধরণের হেপাটাইটিস রোগ রয়েছে, যেমন হেপাটাইটিস বি, এ, সি, ডি, ইত্যাদি। এই ভাইরাস জীবাণু এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে যায় এবং প্রাথমিকভাবে যখন কেউ এই রোগে আক্রান্ত হয় তখন কর্তব্যবিধি অনুসারে তাদের উচিত পরিচর্যা নেওয়া হয়।
Table of Contents
Toggle০১.হেপাটাইটিস বি কি?
হেপাটাইটিস বি একটি ভাইরাল সংক্রমণ যা লিভারকে সরাসরি প্রভাবিত করে। এটি হেপাটাইটিস ভাইরাস বি (HBV) দ্বারা সৃষ্ট, যা সূঁচ বা সিরিঞ্জ ভাগ করে নেয়া, রক্ত,এবং অন্যান্য শারীরিক তরলের মাধ্যমে প্রেরণ করা যেতে পারে। প্রসবের সময় মা থেকে শিশুর মধ্যেও ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
০২. সংক্রমণের কারণ সমুহ
- সূঁচ ভাগ করা: সংক্রামিত ব্যক্তির সাথে সূঁচ বা সিরিঞ্জ ভাগ করার ফলে ভাইরাস সংক্রমণ করতে পারে। যারা ইনজেকশন ওষুধ ব্যবহার করেন তাদের মধ্যে এটি সংক্রমণ একটি সাধারণ ধরণ হিসেবে গণ্য করা হয়।
- মা থেকে শিশুর সংক্রমণ: হেপাটাইটিস রোগের প্রকার বি এ আক্রান্ত মায়েদের থেকে জন্ম নেওয়া শিশুরা প্রসবের সময় সংক্রামিত হতে পারে। নবজাতকের টিকা সহ সঠিক চিকিৎসা যত্নের মাধ্যমে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক কমানো করা যেতে পারে। কিন্তু এ টিকা না দেয়া হলে শিশুর স্বাস্থ্য দিন দিন অবনতির দিকে যেতে থাকে।
- যৌন যোগাযোগ: সংক্রমিত সঙ্গীর সাথে অরক্ষিত যৌন যোগাযোগের মাধ্যমে সংক্রমণ হতে পারে।তাই এ ধরণের যোগাযোগ থেকে নিজেকে বিরত রাখা উচিত।
- পেশাগত এক্সপোজার: স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এবং অন্যান্য ব্যক্তি যারা তাদের চাকরিতে রক্ত বা শরীরের অন্যান্য তরলের সংস্পর্শে আসে তারা সবচেয়ে বেশি পরিমাণে সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকতে পারে।
- ব্যক্তিগত যোগাযোগ: হেপাটাইটিস ভাইরাস বি এ সংক্রামিত ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমেও রোগ ছড়িয়ে পারে, যেমন টুথব্রাশ,ব্লেড বা রেজার ভাগ করে নেওয়া।
এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে এই রোগটি নৈমিত্তিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়ায় না, যেমন আলিঙ্গন, বা খাবার বা পানীয় ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে। কাশি বা হাঁচির বা শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমেও ভাইরাস ছড়ায় না।কিন্তু এটা ধারণা করা হয় যে হেপাটাইটিস এর প্রকার বি আর এইচআইভি উভয়ের সংক্রমণের কারণ প্রায় একই রকম।
০৩.হেপাটাইটিস বি কি খুব গুরুতর?
হ্যাঁ, মানব শরীরের জন্য এই হেপাটাইটিস এর প্রকার বি একটি মারাত্মক রোগ হতে পারে । এই ভাইরাস (এইচবিভি) যেহেতু লিভারের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, তাই এর ফলে লিভারের ক্ষতি, সিরোসিস, লিভার ফেইলার এমনকি লিভার ক্যান্সারও হতে পারে।
০৪.স্বল্পস্থায়ী পর্যায়
স্বল্পস্থায়ী পর্যায়টি হল হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের এমন একটি অবস্থা যা সাধারণত লক্ষণ ছাড়াই হয়। এটি সাধারণত নিজেই ঠিক হয়ে যায় এবং এর ঝুঁকির মাত্রা কম।
স্বল্পস্থায়ী হেপাটাইটিস এর ধরণ বি ভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনও লক্ষণ না থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে মানসিক সমস্যা বা ক্ষুধামন্দা হতে পারে। এই অবস্থায় হেপাটাইটিস এর ধরণ বি সংক্রমিত ব্যক্তির মধ্যে যে ভাইরাসটি আছে সেটির বিকল্প উৎস হতে পারে এবং অন্য ব্যক্তির সাথে ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
০৫.দীর্ঘস্থায়ী পর্যায়
দীর্ঘস্থায়ী এ রোগের সংক্রমণ হলে গুরুতর লিভারের সমস্যা হতে পারে।এটি দীর্ঘমেয়াদী লিভারের ক্ষতি করতে পারে এবং লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।এই রোগ এর জন্য পরীক্ষা করার পর এবং আপনি যদি ঝুঁকিতে থাকেন বা মনে করেন যে আপনি ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছেন তাহলে আপনার দ্রুত ভ্যাকসিনেশন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
০৬.হেপাটাইটিস বি হলে কি মানুষ মারা যায়?
হ্যাঁ, এই রোগটি যেহেতু একটি মারাত্মক রোগ তাই যদি সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা করা না হয় বা চিকিৎসার পরিপূর্ণ কাজটি সম্পন্ন করা না হয় তাহলে এটিতে মানুষ মারা যায় । এ ধরণের ভাইরাস মানব শরীরের লিভারে আক্রমণ করার কারণে ক্রমশ লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। এই রোগ অবসান হওয়ার পর লিভারে বেশ কিছু অবনতি ঘটে যেখানে শরীরের অন্যান্য অংশের সাথে লিভারের কাজ বাধাগ্রস্থ হয়।
রোগের টিকা, বিশেষজ্ঞের পরামর্শে মেডিকেশন, নিরাপদ রক্ত পরীক্ষা এবং অবসান হওয়ার পর পর্যালোচনা পরিষেবা সহ চিকিৎসা সম্পন্ন করা হয়। এইভাবে সঠিক চিকিৎসা ও যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে রোগীর শরীরের সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়ন করা সম্ভব। তাই আমাদেরকে অবশ্যই এই বিষয়ে সর্বদা সচেতন থাকতে হবে।
আরো পড়ুন-
হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা সময়সীমাঃ এখনই চিকিৎসা শুরু করুন